পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥ পিরোজপুর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাবিবুর রহমান মালেক এবং তার স্ত্রী নীলা রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দুদকের সমন্বিত কার্যালয় বরিশালে মামলা দুটি করা হয়েছে। মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক আলী আকবর এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৯৩২ টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা একটি মামলায় পৌর মেয়র মালেক ও তার স্ত্রী নীলা রহমানকে আসামি করা হয়। অপর একটি মামলায় পৌর মেয়র মালেক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক (সাবেক) তরফদার সোহেল রহমান, পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুস সালাম বাতেনসহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অবৈধভাবে পৌরসভায় ২৫ জন জনবল নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। মামলাটির অন্য আসামিরা হলেনে- পিরোজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হানিফ, পৌর সভার সচিব (অন্যত্র বদলী) মাসুদ আলম, ক্যাশিয়ার (প্রমোশন হিসাব রক্ষক) মাইনুল ইসলাম, সহকারী কর আদায়কারী ( প্রমোশন স্টোর কিপার) মাহাবুবুর রহমান, নিম্নমান সহকারী শারাফাতুন মান্নান, সহকারী কর নির্ধারক ওয়াদুদ খান, সহকারী কর নির্ধারক মিজানুর রহমান, টিকাদানকারী ফরহাদ হোসেন মল্লিক, সহকারী কর আদায়কারী মেহেদি হাসান চপল, সহকারী কর আদায়কারী রাশিদা বেগম, বাজার আদায়কারী রাজু আহমেদ, বাতি পরিদর্শক রবিউল আলম, অফিস সহকারী মাকসুদা খানম, ফটোকপি অপারেটর আনোয়ার হোসেন, টিকাদনকারী জামিউল হক, টিকাদানকারী লাইজু আক্তার, টিকাদানকারী রেক্সোনা মজুমদার, টিকাদানকারী জান্নাতুল ফেরদৌসী, নৈশপ্রহরী ফজলুল হক, নৈশপ্রহরী নজরুল ইসলাম, পিয়ন খাদিজা বেগম, পিয়ন দীপক কুমার পাল, সহকারী কর আদায়কারী মিজানুর রহমান মিন্টু এবং প্রহরী রনজিত। পিরোজপুর পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক ও তার স্ত্রী নীলা রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৯৩২ টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ ডিসেম্বর সম্পদের বিবরণী চেয়ে পৌর মেয়র মালেক, স্ত্রী নীলা রহমান, মেয়ে নওরীন আক্তার ও ছেলে ফয়সাল রহমানের নামে দুদক থেকে নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশের যথাযথ উত্তর না পাওয়ায় কমিশন বরিশালের উপপরিচালক আলী আকবরকে অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় পৌর মেয়র মালেক ও তার স্ত্রী নীলা রহমানকে আসামি করে মামলা করা হয়। অপরদিকে, পৌর মেয়র মালেকসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরেক মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পৌরসভার ২৫ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে পৌরসভার ২৫ জন কর্মচারী নিয়োগে প্রতিজনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাস ও মিনিবাস থেকে অবৈধ চাঁদা আদায়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঠিকাদারি করার অভিযোগ এনেও একই সময়ে নোটিশ দেয়া হয় পৌর মেয়রকে। নোটিশের যথাযথ উত্তর না পাওয়ায় অনুসন্ধানে নামে দুদক। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। অন্যদিকে পিরোজপুর পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের বড় ভাই একেএমএ আউয়াল পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে খাস জমিসহ সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ ও দখলের অভিযোগে এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে গতবছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পৃথক তিনটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই তিনটি মামলায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, হাবিবুর রহমান মালেক গত দুই মেয়াদে পিরোজপুরের পৌর মেয়র। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।
Leave a Reply